ইউটিউব থেকে আয় করার উপায় জানেন কি?

আপনি যদি ইউটিউব থেকে আয় করার উপায় খুঁজে থাকেন তাহলে আজকের আর্টিকেলটি আপনার জন্য। কারণ আজকে আমরা এ আর্টিকেলের মাধ্যমে আলোচনা করব কিভাবে অনলাইন থেকে সহজে আয় করা যায়। ইউটিউব থেকে আয় করার উপায়, ইউটিউব থেকে মাসে কত টাকা ইনকাম করা যায় এবং ইউটিউব থেকে আয় কি হালাল তা জানতে হলে সমস্ত আর্টিকেলটি পড়ার অনুরোধ রইল।


এই আর্টিকেলটিতে আরো বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে তার মধ্যে ভিডিও না বানিয়ে ইউটিউব থেকে ইনকাম, বিজ্ঞাপন দেখে টাকা আয় কি হালাল এবং ইউটিউব থেকে টাকা তোলার উপায় ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এরকম আরো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেতে পুরো আর্টিকেলটি গুরুত্ব সহকারে পড়ুন।

ইউটিউব থেকে আয় করার উপায়

বর্তমান সময়ে ইউটিউব থেকে অনেকে লাখ টাকা ইনকাম করছে। ইউটিউব থেকে আয় করার বিভিন্ন উপায় বা পদ্ধতি রয়েছে। ইউটিউব থেকে ইনকাম বা আয় করতে হলে অবশ্যই আপানার একটি ইউটিউব চ্যানেল থাকতে হবে। আপনি আপনার চ্যানেলের ধরণ এবং আপনার দর্শকদের ইন্টারেস্ট অনুযায়ী ব্যবহার করতে পারেন। এখানে ইউটিউব থেকে আয় করার উপায় নিয়ে আলোচনা করা হলো:

এডসেন্স (AdSense)  থেকে আয়: গুগল এডসেন্স (Google AdSense) থেকে ইনকাম করার জন্য আপনার একটি ইউটিউব চ্যানেল থাকতে হবে। গুগল এডসেন্স একটি বিজ্ঞাপন প্ল্যাটফর্ম যা আপনাকে আপনার ইউটিউব চ্যানেলের ভিডিওতে বিজ্ঞাপন প্রদর্শনের মাধ্যমে আয় করতে সাহায্য করে। এটি গুগল দ্বারা পরিচালিত একটি বিজ্ঞাপন নেটওয়ার্ক। গুগল এডসেন্স বিভিন্ন বিজ্ঞাপনদাতার বিজ্ঞাপন সরবরাহ করে। 

যখন আপনার কন্টেন্টে বিজ্ঞাপন প্রদর্শিত হয় সেই বিজ্ঞাপনগুলি গুগলের বিজ্ঞাপন নেটওয়ার্ক থেকে নির্বাচিত হয়। আপনার কন্টেন্টে দর্শকরা যখন বিজ্ঞাপন দেখে। তখন আপনি আয় করতে শুরু করেন। গুগল প্রতি ক্লিক বা প্রতি হাজার ইম্প্রেশন (CPM) এর ভিত্তিতে আপনাকে পেমেন্ট করে। গুগল এডসেন্স ওয়েবসাইটে গিয়ে একটি অ্যাকাউন্ট তৈরি করুন। আপনাকে আপনার কন্টেন্ট প্ল্যাটফর্মের তথ্য সরবরাহ করতে হবে। 

ইউটিউব চ্যানেল গুগলের নিয়মাবলি পূরণ করে কিনা তা যাচাই করতে হবে। গুগল আপনাকে বিজ্ঞাপন কোড প্রদান করবে যা আপনাকে আপনার ওয়েবসাইট বা ইউটিউব চ্যানেলে এম্বেড করতে হবে। আপনি গুগল এডসেন্সের মাধ্যমে আয় করতে থাকবেন যতক্ষণ পর্যন্ত আপনার বিজ্ঞাপন দর্শকরা দেখে বা ক্লিক করে।

ইউটিউব স্পন্সরশিপ থেকে আয়: ইউটিউব থেকে আয় করার উপায় এর মধ্যে আরও একটি অন্যতম উপায় হলো ইউটিউব স্পন্সরশিপ। এটি হল একটি কৌশল যেখানে একটি কোম্পানি বা ব্র্যান্ড ইউটিউব কন্টেন্ট ক্রিয়েটর বা ইনফ্লুয়েন্সারকে তাদের ভিডিওগুলিতে পণ্যের প্রচার বা বিজ্ঞাপন করার জন্য অর্থ প্রদান করে। এটি ইউটিউব চ্যানেলের জন্য একটি আয় করার উপায় এবং ব্র্যান্ডগুলির জন্য তাদের পণ্যের প্রচার করার একটি মাধ্যম। 

স্পন্সররা ইউটিউব চ্যানেলের সাথে চুক্তি করে তাদের পণ্য বা পরিষেবার প্রচার করে। এটি সাধারণত একটি নির্দিষ্ট সময়কাল ধরে চলে এবং চ্যানেলটির ভিডিও কন্টেন্টে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। স্পন্সরশিপের অংশ হিসেবে ইউটিউব কন্টেন্ট ক্রিয়েটররা স্পন্সরের পণ্য বা পরিষেবা সম্পর্কে আলোচনা পর্যালোচনা করে বা ব্যবহার করে দেখায়। এটি হতে পারে একটি ভিডিও রিভিউ বা একটি টিউটোরিয়াল। অনেক সময় স্পন্সররা বিভিন্ন ধরনের প্যাকেজ অফার করে যেমন একক ভিডিও স্পন্সরশিপ, সাপ্তাহিক/মাসিক স্পন্সরশিপ বা দীর্ঘমেয়াদী চুক্তি।

এফিলিয়েট মার্কেটিং থেকে আয়: ইউটিউবে এফিলিয়েট মার্কেটিং হল একটি কৌশল যেখানে ইউটিউব কন্টেন্ট ক্রিয়েটররা তাদের ভিডিও কন্টেন্টে পণ্য বা পরিষেবার প্রোমোশন এবং বিক্রয় করে বা নির্দিষ্ট অ্যাকশন অর্জিত হলে কমিশন উপার্জন করে। মুলত ভিডিওতে প্রোডাক্ট বা সার্ভিসের লিঙ্ক শেয়ার করে কমিশনের মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করা হলো এফিলিয়েট মার্কেটিং। এই লিঙ্কটি আপনাকে বিক্রয় বা অন্যান্য অ্যাকশন ট্র্যাক করতে সাহায্য করবে। 

প্রথমে একটি এফিলিয়েট প্রোগ্রাম বা নেটওয়ার্ক নির্বাচন করতে হবে। জনপ্রিয় এফিলিয়েট প্রোগ্রামগুলির মধ্যে Amazon Associates, ShareASale, ClickBank, এবং CJ Affiliate অন্তর্ভুক্ত। আপনার ইউটিউব ভিডিওগুলিতে পণ্য বা পরিষেবা সম্পর্কে আলোচনা করুন, রিভিউ করুন, অথবা টিউটোরিয়াল তৈরি করুন। ভিডিওগুলিতে আপনার এফিলিয়েট লিঙ্কের মাধ্যমে দর্শকদের পণ্য কেনার জন্য উদ্বুদ্ধ করতে হবে। দর্শকরা ভিডিও দেখে আগ্রহী হলে সহজেই লিঙ্কে ক্লিক করে পণ্য কিনতে আগ্রহী হবে।

মার্চেন্ডাইজ সেল করে আয়: মার্চেন্ডাইজ সেল হলো ইউটিউব থেকে আয় করার উপায় এর মধ্যে একটি। মার্চেন্ডাইজ সেল হল একটি ব্যবসায়িক কৌশল যেখানে একটি ব্র্যান্ড বা প্রতিষ্ঠানের পণ্য (যেমন টি-শার্ট, হুডি, মগ, বা অন্যান্য ব্র্যান্ডেড আইটেম) বিক্রি করা হয়। এটি সাধারণত ব্র্যান্ডের স্বীকৃতি বাড়ানোর এবং সরাসরি আয় করার একটি উপায় হিসেবে ব্যবহৃত হয়। 


আপনার চ্যানেল বা ব্র্যান্ডের নাম নিয়ে বিভিন্ন মার্চেন্ডাইজ (যেমন টি-শার্ট, কফি মগ) বিক্রি করা। একটি কোম্পানি বা ব্র্যান্ডের লোগো বা স্লোগান সহ পণ্য বিক্রি করা। উদাহরণস্বরূপ একটি জনপ্রিয় মিউজিক ব্যান্ড তাদের লোগো সহ টি-শার্ট বা হুডি বিক্রি করতে পারে।

চ্যানেল সাবস্ক্রিপশনের মাধ্যমে: ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রিপশন হল একটি ফিচার যা ইউটিউব ব্যবহারকারীদের তাদের প্রিয় চ্যানেলগুলির সাথে সম্পর্ক বজায় রাখার সুযোগ দেয়। যখন একজন ব্যবহারকারী একটি চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করে তখন তারা সেই চ্যানেলের নতুন ভিডিও আপলোডের আপডেট পেতে থাকেন। চ্যানেল মালিকদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম যা তাদের দর্শক বৃদ্ধির সুযোগ প্রদান করে এবং তাদের কন্টেন্টের প্রতি আগ্রহ বজায় রাখে এবং অর্থ উপার্জনে সহায়তা করে।

এছাড়াও ইউটিউবের 'মেম্বারশিপ' ফিচার ব্যবহার করে সাবস্ক্রিপশন ফি সংগ্রহ করা। ইউটিউবের 'মেম্বারশিপ' ফিচার ব্যবহার করে সাবস্ক্রিপশন ফি সংগ্রহ করা একটি বিশেষ কৌশল যা চ্যানেল মালিকদের নিয়মিত আয় অর্জন করতে সহায়ক হতে পারে। ইউটিউব মেম্বারশিপ হল একটি ফিচার যা চ্যানেল মালিকদের তাদের সাবস্ক্রাইবারদের থেকে মাসিক ভিত্তিতে অর্থ উপার্জন করতে সহায়তা করে। এটি একটি পেইড সাবস্ক্রিপশন মডেল যেখানে দর্শকরা একটি চ্যানেলে মেম্বার হতে মাসিক ফি প্রদান করে মেম্বাররা বিশেষ সুবিধা এবং এক্সক্লুসিভ কন্টেন্ট পেতে পারেন যা সাধারণ দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত নয়।

কোর্স বা টিউটোরিয়াল বিক্রি করে আয়: এটি ইউটিউব থেকে আয় করার উপায় এর মধ্যে অন্যতম্য। আপনার দক্ষতা বা জ্ঞান শেয়ার করা এবং আয় করার জন্য ইউটিউবে কোর্স বা টিউটোরিয়াল বিক্রি একটি লাভজনক উপায় হতে পারে। যদিও ইউটিউব নিজে সরাসরি কোর্স বিক্রির সুবিধা দেয় না, তবে আপনি বিভিন্ন কৌশল ব্যবহার করে আপনার কোর্স বা টিউটোরিয়াল বিক্রি করতে পারেন। এমন একটি বিষয় নির্বাচন করুন যেখানে আপনার দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা রয়েছে এবং যা দর্শকদের জন্য উপকারী হতে পারে। 

কোর্স বা টিউটোরিয়ালের জন্য বিস্তারিত পরিকল্পনা করুন। এতে পাঠ্য, ভিডিও, কোয়িজ, এবং প্র্যাকটিস এক্সারসাইজ অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। উন্নত মানের ভিডিও তৈরী করুন। Udemy, Teachable, Thinkific: এই প্ল্যাটফর্মগুলিতে কোর্স আপলোড করুন এবং ইউটিউব ভিডিওগুলির লিঙ্ক ব্যবহার করে আপনার কোর্স প্রচার করুন। ইউটিউবে কোর্স বা টিউটোরিয়াল বিক্রি করার মাধ্যমে আপনি আপনার জ্ঞান এবং দক্ষতা শেয়ার করার পাশাপাশি একটি আর্থিক আয়ও অর্জন করতে পারবেন।

প্রোডাক্ট রিভিউ করে আয়: প্রোডাক্ট রিভিউ ভিডিও তৈরি করে ব্র্যান্ড থেকে পেমেন্ট গ্রহণ করা। ইউটিউবে প্রোডাক্ট রিভিউ একটি জনপ্রিয় কন্টেন্ট ফর্ম্যাট যা প্রোডাক্ট সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য, মতামত, এবং ব্যবহারের অভিজ্ঞতা প্রদান করে। এটি একটি চমৎকার উপায় হতে পারে আপনার দর্শকদের জন্য তথ্যপূর্ণ কন্টেন্ট সরবরাহ করার এবং তাদের কেনাকাটার সিদ্ধান্তে সাহায্য করার জন্য। এছাড়া, প্রোডাক্ট রিভিউয়ের মাধ্যমে আপনি আয়ও করতে পারেন যেমন এফিলিয়েট মার্কেটিং বা স্পন্সরশিপের মাধ্যমে। ইউটিউবে প্রোডাক্ট রিভিউ একটি শক্তিশালী কন্টেন্ট ফরম্যাট যা দর্শকদের তথ্যপূর্ণ এবং আকর্ষণীয় কন্টেন্ট প্রদান করতে পারে এবং বিভিন্ন আয়ের সুযোগও তৈরি করতে পারে।

ডিজিটাল প্রোডাক্ট বিক্রি করে আয়: ইউটিউব চ্যানেল থেকে আয় করার জন্য ইউটিউবে ডিজিটাল প্রোডাক্ট বিক্রি করা একটি কার্যকরী উপায়। ডিজিটাল প্রোডাক্টগুলি এমন পণ্য যা ভার্চুয়াল ফরম্যাটে থাকে এবং সাধারণত ডাউনলোড বা অনলাইনে ব্যবহারের জন্য উপলব্ধ থাকে। যেমন: 
  • ই-বুক: শিক্ষামূলক বা বিনোদনমূলক বিষয়বস্তু সহ বই। 
  • অনলাইন কোর্স: বিভিন্ন বিষয় বা স্কিল শেখানোর কোর্স। 
  • টেমপ্লেট এবং ডিজাইন: গ্রাফিক ডিজাইন টেমপ্লেট, ওয়েবসাইট টেমপ্লেট, পিডিএফ টেমপ্লেট। 
  • স্টক ফটো এবং ভিডিও: উচ্চ মানের ছবি বা ভিডিও ক্লিপস। 
  • মিউজিক এবং সাউন্ড এফেক্ট: সঙ্গীত ট্র্যাক বা সাউন্ড এফেক্ট)।

ভিডিও না বানিয়ে ইউটিউব থেকে ইনকাম

ভিডিও না বানিয়ে ইউটিউব থেকে আয় করার কিছু বিকল্প উপায় রয়েছে। যদিও ভিডিও কন্টেন্ট ইউটিউবের মূল ফরম্যাট। তবে নিম্নলিখিত পদ্ধতিগুলি ব্যবহার করে আপনি ইউটিউব প্ল্যাটফর্মে আয় করতে পারেন।
  • ইউটিউব চ্যানেল ম্যানেজমেন্ট: যদি আপনি ইউটিউব চ্যানেল ম্যানেজমেন্টে দক্ষ হন তবে অন্যদের চ্যানেল পরিচালনা করতে পারেন। এটি অন্তর্ভুক্ত করতে পারে কন্টেন্ট পরিকল্পনা, এসইও (SEO), অ্যানালিটিক্স বিশ্লেষণ এবং দর্শকদের সাথে যোগাযোগ।
  • ইউটিউব পডকাস্টিং: আপনি পডকাস্ট শো তৈরি করতে পারেন এবং ভিডিও কন্টেন্ট না তৈরি করে কেবল অডিও কন্টেন্ট আপলোড করতে পারেন। এখানে আপনি অতিথি বা আলোচনা শেয়ার করতে পারেন।
  • ইউটিউব স্ট্রিমিং (লাইভ): লাইভ স্ট্রিমিংয়ে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা, প্রশ্ন এবং উত্তর সেশন বা লাইভ ইভেন্ট আয়োজন করতে পারেন। লাইভ স্ট্রিমিংয়ের সময় দর্শকদের থেকে সুপার চ্যাট বা ডোনেশন প্রাপ্ত হতে পারে।
  • ইউটিউব শর্টস (Shorts): ইউটিউব শর্টস ঝলমলে ভিডিও তৈরি করতে পারেন যা ইউটিউব শর্টস ফরম্যাটে আপলোড করা যায়। এতে কম সময়ের ভিডিও তৈরি করা হয় যা সহজ এবং দ্রুত।
  • কন্টেন্ট কিউরেশন: অন্যদের ভিডিও কন্টেন্টকে কিউরেট করে একটি প্লে-লিস্ট তৈরি করতে পারেন। যা একটি নির্দিষ্ট টপিকের উপর ভিত্তি করে সাজানো হয়। এই প্লেলিস্টগুলো নতুন দর্শকদের আকর্ষণ করতে সাহায্য করতে পারে।
  • ইউটিউব পার্টনার প্রোগ্রাম (YPP): ইউটিউবের পার্টনার প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করে এবং তাদের অটো-জেনারেটেড কন্টেন্ট বা পুরনো ভিডিওগুলো থেকে আয় করতে পারেন।
  • প্যাট্রিয়ন (Patreon) ব্যবহার: ইউটিউব চ্যানেলের জন্য প্যাট্রিয়ন বা অন্যান্য সাবস্ক্রিপশন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে সরাসরি আপনার ফ্যানদের কাছ থেকে আয় করতে পারেন।
  • ইউটিউব অ্যানালিটিক্স এবং ডেটা সেবা: আপনি যদি ইউটিউব অ্যানালিটিক্স এবং ডেটা বিশ্লেষণে দক্ষ হন তবে এই সেবা প্রদান করে আয় করতে পারেন।
  • কন্টেন্ট রিভিউ এবং ক্রিটিক্স: অন্যদের কন্টেন্ট রিভিউ এবং বিশ্লেষণ করে ভিডিও তৈরি করতে পারেন যেগুলি অর্থ উপার্জনের জন্য সহায়ক হতে পারে। এছাড়াও ইউটিউব চ্যানেল অপ্টিমাইজেশন এসইও, এবং অন্যান্য কৌশলগত পরিকল্পনার জন্য পরামর্শদাতা হিসেবে কাজ করতে পারেন। প্রাথমিকভাবে ইউটিউবে সফলতা অর্জনের জন্য, দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে সঠিক কৌশল নির্বাচন করা গুরুত্বপূর্ণ।

ইউটিউব থেকে টাকা তোলার উপায়

ইউটিউব থেকে আয় করা টাকা তোলার জন্য আপনাকে ইউটিউবের নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে। নিচে বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হলো কীভাবে আপনি ইউটিউব থেকে আয় করা টাকা তুলতে পারবেন।
ইউটিউব পার্টনার প্রোগ্রাম (YPP): ইউটিউব পার্টনার প্রোগ্রামে যোগদান করে আপনি ইউটিউবে বিজ্ঞাপন থেকে আয় করতে পারবেন। YPP-তে যোগ দেওয়ার জন্য আপনার নিম্নলিখিত শর্তগুলি পূরণ করতে হবে।
  • গত ১২ মাসে আপনার চ্যানেলে ৪০০০ ঘণ্টার মোট ওয়াচ টাইম থাকতে হবে।
  • আপনার চ্যানেলে কমপক্ষে ১০০০ সাবস্ক্রাইবার থাকতে হবে।
  • আপনার ইউটিউব চ্যানেলের সাথে একটি Google AdSense অ্যাকাউন্ট যুক্ত করতে হবে।
  • Google AdSense অ্যাকাউন্ট: আপনার ইউটিউব আয় Google AdSense অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। প্রথমে একটি Google AdSense অ্যাকাউন্ট তৈরি করতে হবে। আপনার Google AdSense অ্যাকাউন্টে আপনার ঠিকানা, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্য সঠিকভাবে পূরণ করুন। Google AdSense এ আয় তোলার জন্য একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ উপার্জন করতে হবে। সাধারণত মাসিক ১০০ ডলার আয় হল প্রাথমিক থ্রেশহোল্ড। তবে আপনার আয় তোলার জন্য এটি ১০০ ডলার হতে পারে। Google AdSense এ আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট যোগ করতে হবে এবং সেখান থেকে সরাসরি অর্থ ট্রান্সফার করতে হবে।

ইউটিউব থেকে আয় কি হালাল

ইউটিউব থেকে আয় করা ইসলামী শরিয়াহ আইন অনুযায়ী হালাল কি না তা নির্ভর করে কন্টেন্ট এবং আয় প্রক্রিয়ার প্রকৃতির উপর। ইসলামিক বিভিন্ন মৌলিক নীতি অনুসারে একটি আয় বা কাজকে হালাল (বৈধ) হিসেবে বিবেচনা করার জন্য কিছু শর্ত পূরণ করা উচিত। এখানে কিছু বিষয় উল্লেখ করা হলো যা ইউটিউব আয়কে হালাল বা হারাম হিসেবে বিবেচনা করতে সাহায্য করবে।

আপনার ইউটিউব কন্টেন্ট ইসলামী নীতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। এটি হালাল খাদ্য, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, সামাজিক মূল্যবোধ এবং অন্যান্য ইসলামী শিক্ষার ওপর ভিত্তি করে হওয়া উচিত। আপত্তিকর বিষয় যেমন: মাদকদ্রব্য, অশ্লীলতা এবং অন্যান্য নিষিদ্ধ বিষয়বস্তু একেবারেই এড়িয়ে চলা উচিত। ইউটিউবের মাধ্যমে আয় করার জন্য যেসব বিজ্ঞাপন প্রদর্শিত হয়, সেগুলি বৈধ ও ইসলামী নীতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। অর্থাৎ বিজ্ঞাপনগুলিতে হারাম পণ্যের প্রচার করা হলে তা আপনার আয়কে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে। যদি কোনো ব্র্যান্ড বা কোম্পানির সাথে স্পনসরশিপ চুক্তি করেন তাহলে তাদের পণ্য বা সেবা বৈধ এবং ইসলামী নিয়ম অনুসারে হতে হবে। 

কপিরাইট আইন মেনে চলতে হবে এবং অন্যের কন্টেন্ট অবৈধ ব্যবহারের মাধ্যমে আয় করা উচিত নয়। কপিরাইট ভঙ্গ করলে তা ইসলামিকভাবে অবৈধ হতে পারে। লাইভস্ট্রিমিংয়ের সময় দর্শকদের দেওয়া ডোনেশন হালাল হতে পারে তবে তা বৈধ মাধ্যম এবং ইসলামী আইন অনুযায়ী হওয়া উচিত।সুপারচ্যাটের মাধ্যমে দর্শকদের দেওয়া অর্থও তেমনি বৈধ এবং হালাল হতে পারে যদি এটি বৈধ ও নৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়। ইউটিউব থেকে অর্থ আয় করা ইসলামিকভাবে হালাল হতে পারে যদি আপনার কন্টেন্ট, বিজ্ঞাপন, স্পনসরশিপ এবং আয় ব্যবস্থাপনা ইসলামী নীতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়।

বিজ্ঞাপন দেখে টাকা আয় কি হালাল

বিজ্ঞাপন দেখে টাকা আয় করার ব্যাপারে ইসলামী আইন অনুযায়ী হালাল বা হারাম হওয়ার বিষয়টি নির্ভর করে কিছু মূল বিষয় ও শর্তের উপর। বিস্তারিতভাবে এই বিষয়টি ব্যাখ্যা করা হলো। বিজ্ঞাপন যে পণ্য বা সেবার প্রচার করছে তা বৈধ এবং ইসলামী নিয়ম অনুযায়ী হতে হবে। উদাহরণস্বরূপ যদি বিজ্ঞাপনে মদ, অশ্লীলতা বা অন্যান্য হারাম বিষয় প্রচার করে তাহলে সেই বিজ্ঞাপনে অংশগ্রহণ করা ইসলামীক দৃষ্টিকোন থেকে হারাম। 

যদি বিজ্ঞাপন হারাম পণ্য বা সেবার প্রচার করে তাহলে সেই বিজ্ঞাপন দেখার মাধ্যমে আয় করা ইসলামিকভাবে অবৈধ। আপনার কন্টেন্ট ইসলামী নিয়মাবলী অনুযায়ী হতে হবে। যদি আপনি এমন কন্টেন্ট তৈরি করেন যা ইসলামী নীতির বিরুদ্ধে যায় তবে সেই কন্টেন্টের মাধ্যমে আয় করা হালাল হবে না। ইউটিউব বা অন্যান্য প্ল্যাটফর্মের বিজ্ঞাপন নীতির সঙ্গে ইসলামী নীতির মিল থাকতে হবে। অর্থাৎ যে বিজ্ঞাপনগুলি আপনার কন্টেন্টে প্রদর্শিত হচ্ছে সেগুলি ইসলামী নিয়মাবলী অনুযায়ী বৈধ হতে হবে।

যদি আপনি বিজ্ঞাপন দেখে আয় করেন তবে নিশ্চিত করুন যে সেই বিজ্ঞাপন ইসলামীভাবে বৈধ। যেমন: কিছু বিজ্ঞাপন প্ল্যাটফর্ম আপনাকে এক ক্লিক বা দৃশ্যের মাধ্যমে আয় প্রদান করে থাকে। যদি সেই বিজ্ঞাপন বৈধ হয় তবে সাধারণত এই ধরনের আয় ইসলামিকভাবে গ্রহণযোগ্য হতে পারে।

ইউটিউব থেকে মাসে কত টাকা ইনকাম করা যায়

বর্তমান সময়ে ইউটিউব শুধুমাত্র বিনোদনের মাধ্যম নয় বরং আয়ের উৎস হয়ে উঠেছে। বর্তমানে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ইউটিউবে কন্টেন্ট তৈরি করে বিভিন্নভাবে আয় করছে। ইউটিউব থেকে মাসে কত টাকা আয় করা সম্ভব, তা নির্ভর করে বিভিন্ন ফ্যাক্টরের উপর। এই আয়টি ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হতে পারে, কারণ এটি অনেকগুলো বিষয়ের (যেমন: আপনার অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা) উপর নির্ভর করে। যারা মাঝারি মানের এবং ভালো ভিউ এবং সাবস্ক্রাইবার সংখ্যা অর্জন করেছেন তাদের মাসিক আয় ৩০ হাজার টাকা থেকে ৫০ হাজার পর্যন্ত হতে পারে।


পেশাদার ইউটিউবার যারা বড় সংখ্যক ভিউ, সাবস্ক্রাইবার এবং স্পনসরশিপ সহ কাজ করছেন তাদের মাসিক আয় ৫০ হাজার টাকা থেকে ২ লাখ টাকা বা তার বেশি হতে পারে। এটি মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে ইউটিউবের আয় একটি পরিবর্তনশীল বিষয় এবং এটি নিয়মিত আপডেট হওয়া কন্টেন্ট, দর্শক ব্যস্ততা, এবং বিপণনের কৌশল দ্বারা প্রভাবিত হয়। সফল ইউটিউব চ্যানেল তৈরির জন্য ধৈর্য এবং একটি সুপরিকল্পিত কৌশল প্রয়োজন। আমাদের দেশে অনেক উচ্চ মানের ইউটিউবার আছে যারা প্রতি মাসে ৩ লাখ থেকে ৫ লাখ টাকা আয় করে থাকে।

ইউটিউব মনিটাইজেশন পলিসি ২০২৪

ইউটিউবের মনিটাইজেশন পলিসি ২০২৪ এ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এবং আপডেট আনা হয়েছে যা কন্টেন্টে ক্রিয়েটরদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ইউটিউবের মনিটাইজেশন পলিসি সাধারণত ইউটিউব পার্টনার প্রোগ্রাম (YPP) এবং বিজ্ঞাপন পলিসির সাথে সম্পর্কিত। ২০২৪ সালের পলিসি নিম্নলিখিত বিষয়গুলি অন্তর্ভুক্ত করে।

ইউটিউব পার্টনার প্রোগ্রাম (YPP) শর্তাবলী: 
  • আপনার চ্যানেলে গত ১২ মাসে মোট ৪,০০০ ঘণ্টার ওয়াচ টাইম থাকতে হবে।
  • আপনার চ্যানেলে কমপক্ষে ১,০০০ সাবস্ক্রাইবার থাকতে হবে।
  • আপনার Google AdSense অ্যাকাউন্টটি ইউটিউব চ্যানেলের সাথে যুক্ত করতে হবে।
  • ইউটিউবের কমিউনিটি গাইডলাইন, কপিরাইট আইন, এবং বিজ্ঞাপন বান্ধব কন্টেন্টেম্যানেজমেন্ট পলিসি মেনে চলতে হবে।
  • এমন কন্টেন্ট যা আপত্তিকর, ভুয়া তথ্য ছড়ানো, অথবা ভুল তথ্য প্রচার করে তা বিজ্ঞাপনের জন্য অযোগ্য হতে পারে।
  • ব্র্যান্ড স্পনসরশিপ চুক্তি করার ক্ষেত্রে ইউটিউবের বিজ্ঞাপন নীতির সাথে সামঞ্জস্য রাখতে হবে।
  • কপিরাইট আইন এবং ইউটিউবের কপিরাইট পলিসি অনুসরণ করতে হবে। কপিরাইট সমস্যা এড়িয়ে চলতে হবে অন্যথায় মনিটাইজেশন বন্ধ হতে পারে।
  • Google AdSense অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে আয় তোলার জন্য নিয়মাবলী মেনে চলতে হবে। আপনার আয় ১০০ ডলার হলে পেমেন্ট রিকোয়েস্ট করা যাবে।

লেখকের মন্তব্য - ইউটিউব থেকে আয় করার উপায়

আজকের আর্টিকেলটিতে মুলত ফ্রিল্যান্সিং শিখে কিভাবে আয় করা যায় সে বিষয়ে আলোচনা করেছি। তার মধ্যে ইউটিউব থেকে আয় করার উপায় হলো অন্যতম। এছাড়াও ইউটিউব থেকে মাসে কত টাকা ইনকাম করা যায় এবং ভিডিও না বানিয়ে ইউটিউব থেকে ইনকাম করার উপায় এ সকল বিষয়সমূহ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

আশা করছি এই আর্টিকেল থেকে আপনারা অনেক কিছু জানতে পারবেন। আর্টিকেলটি যদি আপনাদের ভাল লাগে তাহলে পরিচিত জনের সাথে অবশ্যই শেয়ার করবেন। যেন অন্যরা এ সম্পর্কে জানতে পারে। আরও নতুন আর্টিকেল পড়ার জন্য নিউজ ম্যাক্স বিডি ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করার অনুরোধ রইল।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url