বেগুন খাওয়ার উপকারিতা জানুন

প্রিয় দর্শক গর্ভাবস্থায় বেগুন খাওয়ার উপকারিতা অনেক খোঁজাখুঁজি করার পরও হয়তো খুঁজে পাচ্ছেন না। আজকে আমরা এ আলোচনার মাধ্যমে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করব। বেগুনের উপকারিতা ও অপকারিতা জানতে হলে সমস্ত আর্টিকেলটি পড়ার অনুরোধ রইল।

বেগুন খাওয়ার উপকারিতা

প্রিয় দর্শক এই আর্টিকেলটিতে আরো বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে তার মধ্যে সাদা বেগুন খাওয়ার উপকারিতা এবং বেগুন খেলে কি এলার্জি হয় তা উল্লেখযোগ্য। এরকম আরো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেতে পুরো আর্টিকেলটি গুরুত্ব সহকারে পড়ুন।

ভূমিকা

বেগুন হলো একটি সুস্বাদু ও জনপ্রিয় সবজি এটিকে আমরা প্রতিনিয়ত খেয়ে থাকি। বেগুনের বৈজ্ঞানিক নাম Solanum melongena এবং ইরেজি নাম Brinjal বা eggplant। ধারণা করা হয় বেগুনের উদ্ভব ভারতীয় উপমহাদেশে আবার অনেকে মনে করে এটির উদ্ভব আফ্রিকা মহাদেশে হতে পারে। বেগুন গাছের উচ্চতা ৪০ থেকে ১৫০ সে.মি. হয়ে থাকে।

বেগুনের ইতিহাস অত্যন্ত প্রাচীন এবং এটি প্রথম চীন ও ভারতীয় উপমহাদেশে চাষ করা হয়েছিল। আধুনিক যুগে, এটি বিশ্বের বিভিন্ন অংশে জনপ্রিয় একটি সবজি হিসেবে পরিচিত, যা বিভিন্ন রান্নার শৈলীতে ব্যবহৃত হয়। এটি বিভিন্ন আকার, রঙ এবং স্বাদের হতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে লম্বা, বেগুনি, গোলাকার, সাদা এবং সবুজ প্রকার।

বেগুনের পুষ্টিগুণও অনেক। এতে উচ্চ পরিমাণে ফাইবার, ভিটামিন, এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকে, যা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। বিশেষভাবে, বেগুনের ফাইবার হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। এ ছাড়া গর্ভাবস্থায় বেগুন খাওয়ার উপকারিতা রয়েছে।

বেগুন খাওয়ার উপকারিতা

প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় আমরা যে সকল সবজি পছন্দ করি তার মধ্যে বেগুন অন্যতম একটি সবজি। বেগুন খুব সহজে রান্না করা যায় যার। পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ সবজিটির অনেক উপকারিতা রয়েছে। নিম্নে বেগুনের উপকারিতা সর্ম্পকে জেনে নেয়া যাক। বেগুনে রয়েছে প্রচুর পরিমানে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, পটাসিয়াম ও কপার। এ সকল উপাদান আমাদের হাড়কে সুস্থ ও মজবুত রাখতে বিশেষ ভুমিকা পালন করে।

বেগুনে প্রচুর ফাইবার থাকার করণে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রন করে। এ ছাড়াও বেগুনে পলিফেনল বা প্রাকৃতিক উদ্ভিদ যৌগ রয়েছে। পলিফেনল হলো সেই প্রাকৃতিক যৌগ উপাদান যা ইনসুলিনের নিঃসরন বাড়ায়। তাই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে বেগুনে যে সকল অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন বি৬ ও ফ্ল্যাভোনয়েডস রয়েছে সেগুলো হৃদরোগের ঝুকি কমায়।

বেগুনে আরোও রয়েছে পটাসিয়াম ও অ্যান্থোসায়ানিন এর মত উপাদান যার ফলে উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রন হয়। বেগুনে থাকে সোলাসোডিন র‍্যামনোসিল গ্লাইকোসাইডস নামক উপাদান যা টিউমার কোষকে মেরে ফেলে এবং বিশেষ ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। বেগুনে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকার কারণে ওজন কমাতে সাহায্য করে। বেগুনে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার যা আমাদের খিদে কমায় এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। এ ছাড়াও গর্ভাবস্থায় বেগুন খাওয়ার উপকারিতা রয়েছে।

বেগুন শরীরের টক্সিন পদার্থ বের করে দেয়। বেগুন রক্ত শূন্যতা কমাতে সাহায্য করে। কারণ বেগুনে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন। আয়রন হিমোগ্লোবিন তৈরিতে সাহায্য করে। তাই খাদ্য তালিকায় বেগুন রাখলে শরীরে রক্ত শূন্যতার পরিমাণ কমবে। বেগুন চোখের স্বাস্থ্যে জন্য অতি উপকারি। বেগুনে রয়েছে ভিটামিন এ। ভিটামিন এ এর অভাবে রাতকানা রোগসহ চোখের আরোও অনেক সমস্যা হয়ে থাকে।

সাদা বেগুনের উপকারিতা

সবুজ বা বেগুনি বেগুনের থেকে সাদা বেগুনের উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ কিছুটা বেশী। সাদা বেগুনে রয়েছে পটাসিয়াম, কপার, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন বি এবং ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস। ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস যা মস্তিষ্কের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সাদা বেগুন ডায়াবেটিকস রোগীদের জন্য উপকারী কারণ সাদা বেগুন সুগার নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে থাকে।

এছাড়াও সাদা বেগুন ওজন নিয়ন্ত্রণ করে কারণ সাদা বেগুনে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার যা অল্প পরিমাণ খেলে পেট ভরা মনে হয়। সাদা বেগুন রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল এর পরিমাণ কমাতে সাহায্য করে। খারাপ কোলেস্টেরলকে ধ্বংস করতে সাহায্য করে তাই সাদা বেগুন হার্টের জন্য উপকারী এবং উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে রাখে। বেগুন একটি পুষ্টিকর সবজি তাই গর্ভাবস্থায় বেগুন খেলে অনেক উপকার পাওয়া যায়। তাই বলা যায় অন্য বেগুনের চেয়ে সাদা বেগুনের উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ বেশী।

সবুজ বা বেগুনী রঙ্গের বেগুন খেলে অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় পেটে গ্যাস বা এসিডিটি বেড়ে যায় কিন্তু সাদা বেগুন খাওয়ার ফলে গ্যাস বা এসিডিটি সমস্যা হয় না। বেগুনে অক্সালেট নাম একটি উপাদান রয়েছে। এটি কিডনি রোগীদের জন্য ক্ষতিকর কিন্তু সাদা বেগুনে এ উপাদানটি না থাকার কারণে কিডনি রোগীও খেতে পারে। তাহলে আমরা বুঝতে পারলাম অন্যা বেগুনের চেয়ে সাদা বেগুনের উপকারিতা অনেক বেশী।

গর্ভাবস্থায় বেগুন খাওয়ার উপকারিতা

গর্ভাবস্থায় বেগুন খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারিতা নিয়ে আসতে পারে। এটি একটি পুষ্টিকর সবজি যা মা এবং শিশুর সুস্থতা বজায় রাখতে সহায়ক হতে পারে। বেগুনে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ এবং ভিটামিন ই রয়েছে। ভিটামিন এ ও ই অন্তঃসত্তা মহিলাদের গর্ভস্থ ভ্রূনের পুর্নাঙ্গ বিকাশ ঘটায়। বেগুন রক্ত শূন্যতা কমাতে সাহায্য করে। কারণ বেগুনে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন। আয়রন হিমোগ্লোবিন তৈরিতে সাহায্য করে। তাই খাদ্য তালিকায় বেগুন রাখলে শরীরে রক্ত শূন্যতার পরিমাণ কমবে।

গর্ভবতী মায়েরা গর্ভাবস্থায় অনেক ধরণের রোগে আক্রান্ত হয়। যার ফলে গর্ভের ভ্রূনের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। বেগুনে থাকা ভিটামিন সি গর্ভবতী মায়ের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে মা ও শিশুকে সুরক্ষিত রাখতে সহায়তা করে। বেগুনে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্টস যেমন আ্যান্থোসায়ানিন এবং ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড গর্ভাবস্থায় মায়ের এবং শিশুর সেলগুলিকে ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে সহায়ক।

এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। গর্ভাবস্থায় শরীরের অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি হওয়া সাধারণ বিষয়, তবে বেগুনের কম ক্যালোরি এবং উচ্চ ফাইবারের উপস্থিতি আপনাকে পূর্ণ রাখতে সাহায্য করে এবং অতিরিক্ত ওজন বাড়ানোর ঝুঁকি কমায়। বেগুনে থাকা পটাসিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক, যা গর্ভাবস্থায় উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। বেগুনে থাকা নানা ধরনের ভিটামিন ও মিনারেলস গর্ভাবস্থায় শরীরের নানান ধরনের ব্যথা ও অস্বস্তি কমাতে সহায়ক হতে পারে।

বেগুন খেলে কি এলার্জি হয়

অনেক মানুষ আছে যাদের বিভিন্ন খাবার থেকে থেকে এলার্জি হয়। তাদের ক্ষেত্রে বেগুন থেকে এলার্জি হয়। বেগুন খাওয়ার পর সাধারণত যদি কারো চোখ চুলকায়, ত্বক লাল হয়ে ফুলে যায়, গলার ভিতর চুলকায়, শরীরের অন্যান্য অংশ ফুলে যায় তাহলে বুঝতে হবে সে এলার্জি আক্রান্ত হয়েছে। বিশেষ ক্ষেত্রে এলার্জি মারাত্নক আকার ধারণ করতে পারে যেমন শ্বাসনালি ফুলে গিয়ে শ্বাসরোধের মত হতে পারে। এ ধরনের অবস্থায় জীবনের ঝুঁকি বেড়ে যায়। বেগুনে স্যালিসাইলেট নামক এক ধরনের রাসায়নিক থাকে যা এলার্জি বাড়িয়ে দেয়। চিকিৎসা বিজ্ঞানে যাকে স্যালিসাইলেট টক্সিসিটি বলা হয়।

বেগুন খাওয়ার অপকারিতা

বেগুন সাধারণত একটি স্বাস্থ্যকর সবজি হলেও, কিছু পরিস্থিতিতে বা বিশেষ অবস্থায় এর কিছু সম্ভাব্য অপকারিতা হতে পারে। যাদের এলার্জির সমস্যা আছে তাদের বেগুন খাওয়া উচিত নয়। কারণ বেগুনে স্যালিসাইলেট নামক এক ধরনের রাসায়নিক থাকে যা এলার্জি বাড়িয়ে দেয়। যারা অ্যাসিডিটি সমস্যায় ভূগছেন তাদের ক্ষেত্রে বেগুন খেলে বদহজম, পেট ব্যাথা এবং বমি হতে পারে। তাহলে আমরা বুঝতে পারছি যে, বেগুন খাওয়ার উপকারিতা পাশাপাশি বেগুন খাওয়ার অপকারিতা রয়েছে।

বেগুনে কিছু উপাদান থাকে যেগুলো ভ্রূণের বিকাশের জন্য ক্ষতিকর। তাই গর্ভবতী মহিলাদের বেগুন খাওয়ার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। বেগুনে অক্সালেট নাম একটি উপাদান রয়েছে যা কিডনিতে পাথর হতে সহায়তা করে। তাই কিডনী রোগীদের বেগুন খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত। যেহেতু বেগুন খাওয়ার অপকারিতা রয়েছে তাই যাদের কিছু শারীরিক সমস্যা আছে তারা অবশ্যই সাবধানতা অবলম্বন করবেন।

বেগুনের পুষ্টি উপাদান

প্রতি ১০০ গ্রাম (শক্তি ২৫ কিলোক্যালোরি) বেগুনে নিম্ন উল্লিখিত পুষ্টি উপাদান রয়েছে। (সূত্রঃ ইউএসডিএ)।
  • মোট ফ্যাট ০.২ গ্রাম
  • স্যাচুরেটেড ফ্যাট ০ মি.গ্রা.
  • কোলেস্টোরেল ০ মি.গ্রা.
  • সোডিয়াম ২ মি.গ্রা.
  • পটাসিয়াম ২২৯ মি.গ্রা.
  • মোট কার্বোহাইড্রেট ৬ গ্রাম
  • ডায়াটেরি ফাইবার ৩ গ্রাম
  • সুগার ৩.৫ গ্রাম
  • প্রোটিন ১ গ্রাম
  • ভিটামিন সি ৩%
  • আয়রন ১%
  • ভিটামিন বি৬ ৫%
  • ম্যাগনেসিয়াম ৩%

লেখকের মন্তব্য

বেগুন একটি অতি জনপ্রিয় সুস্বাদু ও পুষ্টিকর সবজি। বেগুন ভাজা, অন্য তরকারি বা মাছের সাথে আমরা প্রতিনিয়ত খাদ্য তালিকায় রাখি। আমরা অনেকেই বেগুনের পুষ্টিগুণ, পুষ্টি উপাদান, উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে অবহিত নয়। এ আর্টিকেলটিতে বেগুনের উপকারিতা ও অপকারিতা, গর্ভাবস্থায় বেগুন খাওয়ার উপকারিতা, পুষ্টিগুণ ও পুষ্টি উপাদান ইত্যাদি বিষয়সমূহ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

আশা করছি এই আর্টিকেল থেকে আপনারা অনেক কিছু জানতে পারবেন। আর্টিকেলটি যদি আপনাদের ভাল লাগে তাহলে পরিচিত জনের সাথে অবশ্যই শেয়ার করবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url