অধিক ডিম উৎপাদনকারী মুরগির জাতের নাম

প্রিয় দর্শক অনেক খোঁজাখুঁজি করার পরও হয়তো অধিক ডিম উৎপাদনকারী মুরগির জাতের নাম সম্পর্কে কোন তথ্য খুঁজে পাচ্ছেন না। আজকে আমরা এ আর্টিকেলের মাধ্যমে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করব। উন্নত জাতের দেশী মুরগি, দেশি মুরগি চেনার উপায় ও দেশি মুরগির ডিমের পুষ্টিগুণ জানতে হলে সমস্ত আর্টিকেলটি পড়ার অনুরোধ রইল।

অধিক ডিম উৎপাদনকারী মুরগির জাতের নাম

প্রিয় দর্শক এই আর্টিকেলটিতে আরো বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে তার মধ্যে অধিক ডিম উৎপাদনকারী মুরগির জাতের নাম, ফাউমি মুরগি কত দিনে ডিম দেয় এবং সোনালী ও দেশি মুরগির পার্থক্য কি তা উল্লেখযোগ্য। এরকম আরো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেতে পুরো আর্টিকেলটি গুরুত্ব সহকারে পড়ুন।

ভূমিকা

মুরগি হলো একটি গৃহপালিত পাখি। মুরগির বৈজ্ঞানিক নাম (Gallus Gallus Domesticus) এবং ইংরেজি শব্দ হলো (Hen)। প্রোটিনের অন্যতম উৎস হলো মুরগির মাংস ও ডিম। অধিক ডিম উৎপাদনকারী জাতের কোন মুরগি সবচেয়ে ভাল তা আমরা অনেকেই জানতে চায়। ভাল মানের মুরগি পালন করলে অধিক ডিম পাওয়া যায়। উন্নত জাতের মুরগি পালন করে বাণিজ্যিকভাবেও লাভবান হওয়া য়ায়। তবে ডিম উৎপাদনের বিষয়টা নির্ভর করে মুরগি পরিচর্যা, লালন পালন ও সুষম খাদ্য প্রদানের উপর ভিত্তি করে। 

অনেক সময় দেখা যায় অনেক খামারী একই জাতের মুরগি পালন করে কেউ লাভবান হয় আবার কেউ লাভ করতে পারে না। অধিক ডিম উৎপাদনকারী মুরগির জাতের নাম জেনে ডিম উৎপাদনের জন্য খামার করলে আশা করা যায় লাভবান হতে পারবেন।

অধিক ডিম উৎপাদনকারী মুরগির জাতের নাম

মুরগি সাধারণত সুষম খাদ্য ও সঠিক পরিচর্যা ও লালন পালন দ্বারা বেশি ডিম উৎপাদন করতে পারে। তবুও বিভিন্ন পরিবেশ, খাদ্য এবং যত্নের উপর ভিত্তি করে ডিম উৎপাদনের তারতম্য হতে পারে। চলুন অধিক ডিম দেয় এমন মুরগির কয়েকটি জাত সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
  • হাইব্রিড লেয়ার মুরগি: এটি সবচেয়ে অধিক ডিম উৎপাদনকারী মুরগি এবং অধিক ডিম উৎপাদনকারী মুরগির জাতের মধ্যে অন্যতম। আপনি যদি বাণিজ্যিকভাবে খামার করতে চান তাহলে হাইব্রিড লেয়ার মুরগি পালন করতে পারেন। কারণ এ মুরগি প্রতিবছর ৩৫০ টির অধিক ডিম দিয়ে থাকে। এ মুরগির ডিম দেওয়ার হারের কথা বললে ৯৫% ডিম দিয়ে থাকে। তবে আপনাকে সঠিকভাবে লালন পালন ও পরিচর্যা করতে হবে। হাইব্রিড লেয়ার মুরগি দুই ধরণের হয়ে থাকে একটি হল সাদা লেয়ার মুরগি অন্যটি লাল লেয়ার মুরগি। এ দুটির মধ্যে সাদা লেয়ার মুরগি বেশী ডিম দিয়ে থাকে এবং ডিমের আকার কিছুুটা বড়। এর বিভিন্ন জাতের মধ্যে বিবি ৩০০ আমাদের দেশের আবহাওয়া উপযুক্ত ও পালন উপযোগী। এ সকল জাতের মুরগির বাচ্চা আমাদের দেশে উৎপাদন হয়ে থাকে। বিভিন্ন খামারী ও বাচ্চা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করে বাচ্চা সংগ্রহ করতে পারবেন।
  • আর.আই.আর মুরগি: আপনারা যারা নতুন খামার করতে চান অথবা নতুন খামারী তারা আর. আই. আর মুরগি পালন করতে পারেন কারণ এই মুরগিট বছরে ২৭০ টি থেকে ৩০০ টি ডিম দেয়। এ মুরগির লালন পালন ও পরিচর্যা অনেকটাই সহজ এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশী। আর.আই.আর মুরগির বাচ্চা বিভিন্ন বাচ্চা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ও প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তরে পাবেন।
  • ফাউমি মুরগি: দেশীয় জাতের মধ্যে ফাউমি মুরগি সবচেয়ে ভাল। ফাউমি মুরগি হলো অধিক ডিম উৎপাদনকারী মুরগির জাতের মধ্যে একটি জাত। ফাউমি মুরগি বছরে প্রায় ৩০০ টি থেকে ৩২০ টি ডিম পাড়ে। এ মুরগির ডিম অন্য মুরগির চেয়ে আকারে ছোট। এ মুরগিকে আবদ্ধ পদ্ধতিতে দেশীয় মুরগির মত লালন পালন করা যায়। ফাউমি মুরগির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক বেশী। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে যোগাযোগ করলে ফাউমি মুরগির উন্নতমানের বাচ্চা সংগ্রহ করতে পারবেন। এ ছাড়াও বিভিন্ন খামারীর নিকট থেকে সংগ্রহ করতে পারবেন।
  • সোনালী মুরগি: সোনালী মুরগি আমরা সকলেই চিনি। সোনালী মুরগির মাংসে স্বাদ প্রায় দেশী মুরগির মত। খামারীরা সাধারণত মাংস উৎপাদনের জন্য সোনালী মুরগি পালন করে। এ মুরগি খোলা বা মুক্ত অবস্থায় প্রাকৃতিকভাবে লালন পালন করা যায়। অনেকই ধারণা করে সোনালী মুরগি ডিম পাড়ে না কিন্তু এ ধারণা ভূল সোনালী মুরগি ডিম পাড়ে এবং দেশী মুরগির তুলনায় অনেক বেশী। এ মুরগি বছরে প্রায় ২০০ টি থেকে ২৫০ টি ডিম দেয়। সোনালী মুরগি ৭৫% ডিম দিয়ে থাকে। এ মুরগির বাচ্চা আমাদের দেশে খামারীদের কাছে পাওয়া যায়।
  • হোয়াইট লেগহর্ন মুরগি: বাণিজ্যিকভাবে ডিম উৎপাদনের জন্য হোয়াইট লেগহর্ন আরও একটি উন্নত জাত। হোয়াইট লেগহর্ন মুরগি ডিম উৎপাদনকারী মুরগির জাতের মধ্যে আরও একটি অন্যতম জাত। এ জাতের লালন পালন ও পরিচর্যা অনেকটাই সহজ। এ মুরগির ডিমের রং সাদা। এ মুরগি প্রতিবছর ৩০০টি থেকে ৩২০ টি ডিম দেয়। তবে লালন পালন ও পরিচর্যার উপর ভিত্তি করে ডিমের সংখ্যার তারতম্য হতে পারে। এ মুরগির বাচ্চা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ও স্থানীয় খামারীদের নিকট থেকে সংগ্রহ করতে পারেবন।

উন্নত জাতের দেশী মুরগি

  • গলা ছিলা মুরগি: এটি উন্নত জাতের দেশী মুরগি। এ জাতের মুরগির গলাতে পালক থাকে না। বিভিন্ন ধরনের রং এর দেখা যায়। সাধারণত লালচে ও কালো রং এর পালক বেশী দেখা যায়। একটি প্রাপ্ত বয়স্ক মোরগ ১৫০-২.২৫ কেজি এবং মুরগি ১.২০-১.৫০ কেজি হয়ে থাকে। বছরে ডিম উৎপাদন ক্ষমতা ৯০ টি থেকে ১২০ টি। ডিমের রং বাদামী। বাংলাদেশে সব জায়গায় পাওয়া যায়।
  • হিলি মুরগি: দেখতে অন্য দেশী মুরগির তুলনায় গোলাকৃতি, পালকহীন পা, হলদে চামড়া বিশিষ্ট বিভিন্ন রং এর মুরগি দেখা যায় তার মধ্যে ধুসর ও লাল রং এর বেশী। এটি অন্য জাতের তুলনা আকাররে বড়। প্রাপ্ত বয়স্ক মোরগের ওজন ২.০০ থেকে ৩.৫০ কেজি হয়ে থাকে। বছরে ৮০ টি থেকে ১০০ টি ডিম দেয়, ডিমের রং বাদামী। রোগ ব্যাধি কম এবং দেশীয় আবহাওয়ার উপযোগী। পার্বত্য এলাকায় বিশেষ করে চট্টগ্রাম এলাকায় বেশী পাওয়া যায়।
  • আসিল মুরগি: এটি উন্নত জাতের দেশী মুরগি। এটি গাড় খয়েরি রং এর পালক বিশিষ্ট মুরগি। পালক বিহীন পা এবং অন্যান্য দেশী জাতের তুলনায় লম্বাটে। এটি মুলত মাংস উৎপাদনকারী জাত হিসেবে পরিচিত। এটি বছরে মাত্র ৩০ টি থেকে ৩৫ টি ডিম দিয়ে থাকে। প্রাপ্ত বয়স্ক মোরগের ওজন ২.৫০ থেকে ৪.৫০ কেজি এবং মুরগির ওজন ১.৭০ থেকে ২.৫০ কেজি হয়ে থাকে। এটি মুলত বৃহত্তর কুমিল্লা বিশেষ করে ব্রাহ্মনবাড়িয়ায় পাওয়া যায়।
  • দেশী ডোয়ার্ফ মুরগি: এ জাতের মুরগির পা অপেক্ষাকৃত খাট। মোরগ ও মুরগির মধ্যে পালকের তারতম্য দেখা যায়। অনেক রং এর মধ্যে লাল রং এর মোরগ এবং মুরগির মধ্যে লাল মেটে রং আকর্ষনীয়। প্রাপ্ত বয়স্ক মোরগের ওজন ১.৫০ থেকে ২.০০ কেজি এবং মুরগির ওজন ১.২৫ থেকে ১.৫০ কেজি। বছরে ডিম উৎপাদন ক্ষমতা ১০০ টি থেকে ১২০ টি। বাংলাদেশের প্রায় সকল অঞ্চলে এ জাতের মুরগি পাওয়া যায়।
  • সাধারণ দেশী মুরগি: বাংলাদেশের সর্বত্রই পাওয়া যায়। সাধারণত যে সকল মুরগি হাটে বাজারে, গ্রামে গঞ্জে পাওয়া যায় তার সব গুলোই এ জাতের অন্তর্ভূক্ত। এ মুরগি নিদির্ষ্ট কোন রং এর হয়না। বিভিন্ন রং এর হয়ে থাকে। একটি প্রাপ্ত বয়স্ক মোরগের ওজন ১.৫০ থেকে ২.০০ কেজি এবং মুরগির ওজন ১.০০ থেকে ২.০০ কেজি হয়ে থাকে। বাৎসরিক ডিম উৎপাদন ক্ষমতা ৯০ টি থেকে ১২০ টি।
  • দেশী মুরগি: দেশী মুরগির মাংস ও ডিম অন্য সকল জাতের তুলনায় সুস্বাদযুক্ত। অন্য জাতের তুলনায় দেশী মুরগির ডিম আকারে ছোট হওয়ার পরও ডিম ও মাংসের দাম অনেক বেশী। অল্প খরচে লালন পালন করা যায়। নিজ বাড়িতে মুক্ত অবস্থায় লালন পালন করা যায়। দেশী মুরগির রোগ ব্যাধি কম হওয়ার কারণে ঝুকি কম থাকে।

দেশি মুরগি চেনার উপায়

দেশী মুরগি আমাদের দেশীয় পরিবেশে বিশেষভাবে অভিযোজিত এবং এই মুরগিগুলি বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের জন্য পরিচিত। দেশী মুরগির কিছু মূল বৈশিষ্ট্য নীচে তুলে ধরা হলো:
  • আকার এবং গঠন: সাধারণত দেশী মুরগি অন্যান্য বাণিজ্যিক জাতের তুলনায় ছোট থেকে মাঝারি আকারের হয়। শক্তিশালী ও মজবুত শরীরের গঠন থাকে। সাধারণত তাদের পেশী গঠনও ভালো হয়।
  • পালক এবং রঙ: দেশী মুরগির পালক সাধারণত ঘন চকচকে উজ্জ্বল এবং বিভিন্ন রঙের হতে পারে। যেমন সাদা, বাদামী, কালো, ছাই রঙ্গ ইত্যাদি।
  • মুখমণ্ডল ও ঠোঁট: দেশী মুরগির মুখমণ্ডল শক্তিশালী এবং ঠোঁট বেশ মোটা এবং শক্তিশালী হয়। তাদের চোখ সাধারণত উজ্জ্বল এবং তীক্ষ্ণ হয়।
  • ডিম উৎপাদন ক্ষমতা: দেশী মুরগিরা প্রায়শই কম ডিম উৎপাদন করে (প্রতি বছর ১০০-১৫০টি ডিম) অন্যান্য বাণিজ্যিক জাতের তুলনায়, তবে তাদের ডিমের গুণমান ভালো।
  • প্রাকৃতিক প্রতিরোধ ক্ষমতা: দেশী মুরগিরা প্রাকৃতিকভাবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি থাকে এবং তাদের কম রোগের প্রবণতা থাকে।
  • পুষ্টিগুণ: তাদের ডিম ও মাংসের পুষ্টি মান অনেক বেশি, কারণ তারা সাধারণত প্রাকৃতিক খাদ্য খেয়ে থাকে।
  • খাদ্যাভ্যাস: দেশী মুরগি সাধারণত প্রাকৃতিক খাদ্য যেমন কেঁচো, পোকামাকড়, ঘাস ইত্যাদি খায়, যা তাদের সুস্থতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।
  • প্রজনন ক্ষমতা: দেশী মুরগিরা প্রজননে বেশ কার্যকর এবং তারা স্বাভাবিকভাবে প্রজনন ক্ষমতা বজায় রাখতে পারে।
  • পরিবেশের প্রতি সহনশীল: দেশী মুরগিরা আমাদের দেশের আবহাওয়া এবং পরিবেশে ভালভাবে খাপ খাওয়াতে পারে। তারা তাপমাত্রা এবং আর্দ্রতার পরিবর্তনের সাথে মানিয়ে নিতে পারে।
  • আচরণগত বৈশিষ্ট্য: দেশী মুরগিরা সাধারণত খুব সক্রিয় এবং চলাফেরা করতে পছন্দ করে। দেশী মুরগি প্রায়শই স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পছন্দ করে এবং উন্মুক্ত পরিবেশে ভালভাবে বেড়ে ওঠে।দেশী মুরগির সাধারণত দলবদ্ধভাবে থাকতে পছন্দ করে।
  • মাংসের গুণমান: দেশী মুরগির মাংস সাধারণত সুস্বাদু এবং স্বাস্থ্যকর। এতে কম চর্বি ও উচ্চ প্রোটিন থাকে। দেশী মুরগির মাংস পুষ্টির দিক থেকে ভালো।
দেশী মুরগির এই বৈশিষ্ট্যগুলি তাদের বিভিন্ন ধরনের ব্যবহার ও প্রচলনের জন্য উপযুক্ত করে তোলে, বিশেষ করে প্রাকৃতিক খামার এবং দেশীয় খাদ্য ব্যবস্থায়।

ফাউমি মুরগি কত দিনে ডিম দেয়

  • প্রথম ডিম: ফাউমি মুরগিরা সাধারণত ৫-৬ মাস বয়সে প্রথম ডিম দিতে শুরু করে। তবে, এটি নির্ভর করে তাদের স্বাস্থ্য, পুষ্টি এবং পালন পদ্ধতির উপর।
  • ডিম উৎপাদন: ফাউমি মুরগিরা বছরে প্রায় ১৫০-২০০টি ডিম দিতে পারে। এটি তাদের খাদ্য, পরিবেশ এবং সাধারণ পরিচর্যার উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হতে পারে। ফাউমি মুরগির ডিম উৎপাদন স্বাভাবিক মুরগির চেয়ে কিছুটা কম হতে পারে, তবে তাদের স্থানীয় পরিবেশে ভাল খাপ খাওয়ার ক্ষমতা এবং শক্তিশালী প্রতিরোধ ক্ষমতা রয়েছে।
পরামর্শ: মুরগির ডিম উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য তাদের প্রোটিন, ভিটামিন এবং মিনারেল সমৃদ্ধ খাদ্য প্রদান করুন। মুরগির স্বাস্থ্য ভাল রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত ভ্যাক্সিনেশন এবং স্বাস্থ্য পরীক্ষা নিশ্চিত করুন। মুরগির বাসস্থান পরিষ্কার ও শুকনো রাখুন যাতে তারা সুস্থ ও সবল থাকে। ডিম উৎপাদনের জন্য পর্যাপ্ত জায়গা ও পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। ফাউমি মুরগির সঠিক পরিচর্যা ও পরিবেশ নিশ্চিত করলে তারা নিয়মিত এবং ভালো মানের ডিম প্রদান করবে।

দেশি মুরগির ডিমের পুষ্টিগুণ

দেশি মুরগির ডিম পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ এবং এটি একটি স্বাস্থ্যকর খাদ্য হিসেবে বিবেচিত হয়। নীচে দেশি মুরগির ডিমের পুষ্টিগুণের বিস্তারিত বর্ণনা দেওয়া হলো:
  • প্রোটিন: একটি দেশি মুরগির ডিমে প্রায় ৬-৭ গ্রাম প্রোটিন থাকে। প্রোটিন শরীরের পেশী গঠন ও পুনর্নির্মাণের জন্য অপরিহার্য। এটি শরীরের কোষের বৃদ্ধির জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।
  • ভিটামিন: দেশী মুরগির ডিম ভিটামিনের উৎস বলা যেতে পারে। কারণ দেশী মুরগির ডিম নিম্নেবর্ণিত ভিটামিনগুলোর উপস্থিতি পাওয়া যায়। যেমন:
  • ভিটামিন এ: দৃষ্টিশক্তি উন্নত করে এবং ত্বক ও মিউকাস মেমব্রেনের স্বাস্থ্যের জন্য সহায়ক।
  • ভিটামিন ডি: ক্যালসিয়াম শোষণে সাহায্য করে এবং হাড় ও দাঁতের স্বাস্থ্য বজায় রাখে।
  • ভিটামিন বি১২: রক্তের উৎপাদন এবং স্নায়ুতন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
  • ভিটামিন বি২: (রিবোফ্লাভিন): শক্তি উৎপাদন এবং কোষের বৃদ্ধি ও মেরামতের জন্য অপরিহার্য।
  • ভিটামিন বি৫: (প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড): মেটাবলিজম এবং শক্তি উৎপাদনে সাহায্য করে।
  • ক্যালসিয়াম: হাড় এবং দাঁতের শক্তি বজায় রাখতে সহায়ক।
  • ফসফরাস: হাড় ও দাঁতের স্বাস্থ্য উন্নত করে এবং শরীরের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে।
  • আয়রন: রক্তের হিমোগ্লোবিন তৈরি করতে সাহায্য করে, যা অক্সিজেন পরিবহণে সহায়ক।
  • স্বাস্থ্যকর চর্বি: একটি দেশি মুরগির ডিমে প্রায় ৫ গ্রাম চর্বি থাকে, যার মধ্যে কিছু ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড থাকতে পারে যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক।
  • অ্যান্টি-অক্সিডেন্টস: চোখের স্বাস্থ্য রক্ষা করে এবং বয়সজনিত দৃষ্টিহীনতা প্রতিরোধ করতে সহায়ক।
  • কোলিন: কোলিন একটি গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি যা মস্তিষ্কের কার্যক্রম এবং স্নায়ুতন্ত্রের জন্য অপরিহার্য।
  • অন্যান্য উপকারিতা: ডিমে খুব কম কার্বোহাইড্রেট থাকে, যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপযুক্ত।
  • দেশি মুরগির ডিম পুষ্টিতে সমৃদ্ধ, তবে এটি পরিমিত পরিমাণে খাওয়া উচিত কারণ অতিরিক্ত চর্বি ও কোলেস্টেরল গ্রহণ স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। সুস্থ ও ভারসাম্যপূর্ণ খাদ্যাভ্যাসের অংশ হিসেবে এটি অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।

সোনালী ও দেশি মুরগির পার্থক্য

সোনালী মুরগি এবং দেশি মুরগি বাংলাদেশের মুরগির দুটি জনপ্রিয় প্রজাতি। তাদের মধ্যে কিছু মৌলিক পার্থক্য রয়েছে যা তাদের স্বাদ, বৃদ্ধির হার এবং ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলে। এখানে সোনালী এবং দেশি মুরগির প্রধান পার্থক্যগুলো উল্লেখ করা হলো:
  • বংশবৃদ্ধি ও উৎপত্তি: সোনালী মুরগি মূলত আধুনিক ব্রিড এবং এটি দেশের বিভিন্ন পোল্ট্রি খামারে ব্যাপকভাবে পালন করা হয়। সোনালী মুরগি বিশেষ করে মাংস উৎপাদনের জন্য উন্নত করা হয়েছে। দেশি মুরগি বাংলাদেশের স্থানীয় প্রজাতি। এটি শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পালিত হয়ে আসছে। দেশি মুরগির উৎপত্তি মূলত বাংলাদেশ এবং ভারতের বিভিন্ন গ্রামীণ অঞ্চলে।
  • শারীরিক বৈশিষ্ট্য: সোনালী মুরগির পালক সাধারণত সোনালী বা বাদামী রঙের হয়ে থাকে। সোনালী মুরগির ঝঁটি বা টোপ ছোট ও ফ্যাকাশে রঙ্গের হয়। এদের শরীর তুলনামূলকভাবে দেশী মুরগির থেকে কম শক্তিশালী কিন্তু পেশীসমৃদ্ধ এবং এরা দ্রুত বৃদ্ধি পায়। দেশি মুরগির পালক বিভিন্ন রঙের হতে পারে। যেমন সাদা, কালো, বাদামী বা মিশ্রিত রঙ। দেশী মুরগির ঝুঁটি বা টোপ আকারে বড় এবং লাল রঙ্গের হয়। এদের শরীর ছোট, শক্তিশালী স্থানীয় পরিবেশের সাথে মানিয়ে চলতে সক্ষম।
  • বৃদ্ধির হার: সোনালী মুরগি দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং সাধারণত ৬-৮ সপ্তাহের মধ্যে বাজারে বিক্রি করার উপযুক্ত হয়। এদের মাংস উৎপাদনের জন্য বিশেষভাবে উন্নত করা হয়েছে। দেশি মুরগি সাধারণত ধীরগতিতে বৃদ্ধি পায়। এদের বড় হতে সময় বেশি লাগে, সাধারণত ১৬-২০ সপ্তাহের মধ্যে পূর্ণ বয়সে পৌঁছে।
  • মাংসের গুণমান: সোনালী মুরগির মাংস সাধারণত সাদা এবং তুলনামূলকভাবে কোমল বা নরম। সোনালী মুরগির মাংসের দাম কম হওয়ায় বাজারে এর মাংসের চাহিদা বেশি এবং মাংসের পরিমাণও বেশি। দেশি মুরগির মাংস কিছুটা লালচে বর্ণের ও শক্ত হয়। স্বাদে খুবই সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর। এর মাংসের গুণমান বেশ উন্নত এবং জনপ্রিয়।
  • স্বাস্থ্য ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা: সোনালী মুরগি অত্যন্ত বাণিজ্যিকভাবে পালন করা হয় এবং এতে কিছু স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যা হতে পারে, যা বিশেষ চিকিৎসা ও নিয়ন্ত্রণের আওতায় রাখতে হয়। দেশি মুরগি সাধারণত শক্তিশালী এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো। তারা বিভিন্ন প্রাকৃতিক পরিবেশে সুরক্ষিত এবং সুস্থ থাকতে পারে।
  • খাদ্যাভ্যাস ও পরিচর্যা: সোনালী মুরগি বাণিজ্যিকভাবে পালন করা হয়। তাই তাদের খাদ্যাভ্যাস এবং পরিচর্যা নির্দিষ্ট পরিকল্পনার আওতায় থাকে। দেশি মুরগি সাধারণত খোলা পরিবেশে পালিত হয় এবং বিভিন্ন প্রাকৃতিক খাবার খেতে পছন্দ করে। তাদের পরিচর্যা প্রাকৃতিক ও ঐতিহ্যগতভাবে চলে।

লেখকের মন্তব্য

মুরগির মাংস ও ডিম অত্যান্ত সুস্বাদু ও প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার। দেশী মুরগি বাংলাদেশের গ্রামীণ অঞ্চলে প্রচলিত একটি জনপ্রিয় প্রজাতি এবং এর মাংসের গুণগত মানের জন্য বিশেষভাবে প্রশংসিত। আমরা অনেকেই উন্নত জাতের দেশী মুরগি, দেশি মুরগি চেনার উপায় ও দেশি মুরগির ডিমের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে অবহিত নয়। এ আর্টিকেলটিতে অধিক ডিম উৎপাদনকারী মুরগির জাতের নাম, উন্নত জাতের দেশী মুরগি, দেশি মুরগি চেনার উপায়, দেশি মুরগির ডিমের পুষ্টিগুণ এবং সোনালী ও দেশি মুরগির পার্থক্য ইত্যাদি বিষয়সমূহ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

আশা করছি এই আর্টিকেল থেকে আপনারা অনেক কিছু জানতে পারবেন। আর্টিকেলটি যদি আপনাদের ভাল লাগে তাহলে পরিচিত জনের সাথে অবশ্যই শেয়ার করবেন। যেন অন্যরা এ সম্পর্কে জানতে পারে। আরও নতুন আর্টিকেল পড়ার জন্য নিউজ ম্যাক্স বিডি ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করার অনুরোধ রইল।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url