সকালে ব্যায়াম করার উপকারিতা - অতিরিক্ত ব্যায়ামের অপকারিতা
প্রিয় দর্শক অনেক খোঁজাখুঁজি করার পরও হয়তো সকালে ব্যায়াম করার উপকারিতা, অতিরিক্ত ব্যায়ামের অপকারিতা সম্পর্কে কোন তথ্য খুঁজে পাচ্ছেন না। আজকে আমরা এ আর্টিকেলের মাধ্যমে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করব। পটল পাতার উপকারিতা, পটল খাওয়ার অপকারিতা ও পটলের পুষ্টিগুণ জানতে হলে সমস্ত আর্টিকেলটি পড়ার অনুরোধ রইল।
প্রিয় দর্শক এই আর্টিকেলটিতে আরো বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে তার মধ্যে সকালে ব্যায়াম করার উপকারিতা, সকালে কি কি ব্যায়াম করা উচিত, শ্বাস প্রশ্বাসের ব্যায়াম করলে কি হয়, সকালে ব্যায়াম করার আগে কি খাওয়া উচিত এবং অতিরিক্ত ব্যায়ামের অপকারিতা কি হয় তা উল্লেখযোগ্য। এরকম আরো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেতে পুরো আর্টিকেলটি গুরুত্ব সহকারে পড়ুন।
ভূমিকা
ব্যায়াম হল শারীরিক স্বাস্থ্যের উন্নতি এবং সুস্থতা বজায় রাখার জন্য বিভিন্ন ধরনের শারীরিক কার্যকলাপ। ব্যায়াম শরীরের পেশী, হাড়, হৃদযন্ত্র, সংবহন তন্ত্রের জটিলতা, টাইপ-২ ডায়াবেটিস এবং অন্যান্য শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া উন্নত করতে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। বিভিন্ন ধরণের শারীরিক ব্যায়াম রয়েছে। নিম্নে কিছু শারীরিক ব্যায়াম নাম উল্লেখ করা হলো:
- দৌড়ানো।
- সাইক্লিং।
- সাঁতার।
- হাঁটা (দ্রুত হাঁটা, হাইকিং)।
- ভার উত্তোলন।
- বডিওয়েট এক্সারসাইজ (পুশ-আপস, স্কোয়াটস, লাংজেস)।
- স্ট্রেচিং (পেশী ও জয়েন্টে লম্বা এবং নমনীয়তা বৃদ্ধি করা)।
- ধ্যান (Meditation): মানসিক শান্তি এবং মনোযোগ বৃদ্ধির জন্য।
- যোগব্যায়াম (Yoga): ধ্যানের সাথে শরীর ও মনের সংযোগ বৃদ্ধি।
ব্যায়াম নির্বাচন করার সময় আপনার লক্ষ্য, শারীরিক অবস্থান এবং পছন্দ অনুযায়ী সঠিক প্রকারের ব্যায়াম বেছে নেওয়া উচিত। স্বাস্থ্য সেবায় ব্যায়ামকে সুস্থতার মহাঔষধ হিসেবে গণ্য করা হয়। শারীকির সুস্থতা অর্জনের জন্য ব্যায়াম গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে।
সকালে ব্যায়াম করার উপকারিতা
সকালে ব্যায়াম করলে আপনার মেটাবলিজম পুরো দিন চলমান থাকে। এর ফলে ক্যালোরি বার্ন হওয়ার হার বৃদ্ধি পায় এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। সকালের ব্যায়াম করার ফলে শরীরে এন্ডোর্ফিনের মুক্তি ঘটে, যা আপনার মুড উন্নত করে এবং দিন শুরু করার সময়ে মানসিক শক্তি প্রদান করে। সকালে ব্যায়াম করলে রাতে ভালো ঘুম আসার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। এটি আপনার শরীরের ঘুম-জাগরণের চক্রকে স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে।
দিনের শুরুতে ব্যায়াম করলে সারাদিনের জন্য স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে এবং আপনাকে মানসিকভাবে শান্ত রাখে। সকালের ব্যায়াম করলে সারাদিনের জন্য শক্তি এবং উদ্যম বজায় থাকে। এটি আপনার কর্মক্ষমতা এবং উদ্যম বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। সকালে ব্যায়াম করলে এটি একটি নিয়মিত অভ্যাস হয়ে ওঠে। কারণ দিনের অন্যান্য ব্যস্ততা বা অলসতা আপনার ব্যায়াম পরিকল্পনাকে ব্যাহত করতে পারে না। সকালের ব্যায়াম মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। যা দিনভর মনোযোগ এবং কনসেন্ট্রেশন বৃদ্ধি করে।
সকালের সময়ে বায়ু সাধারণত বেশি বিশুদ্ধ থাকে, বিশেষ করে শহরের মধ্যে। বাইরে ব্যায়াম করলে আপনার শরীর তাজা বাতাস গ্রহণ করতে পারে। সকালের ব্যায়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক হতে পারে। সকালে ব্যায়াম করার জন্য আপনি কিছু সহজ শারীরিক কার্যকলাপ যেমন হাঁটা, দৌড়ানো, যোগ ব্যায়াম বা অন্যান্য শারীরিক চর্চা করতে পারেন। সকালে ব্যায়াম করার উপকারিতা রয়েছে তেমনি অতিরিক্ত ব্যায়ামের অপকারিতা রয়েছে।
অতিরিক্ত ব্যায়ামের অপকারিতা
অতিরিক্ত ব্যায়াম করা কিছু ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ হতে পারে। যদিও নিয়মিত ব্যায়াম শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। অতিরিক্ত ব্যায়াম করতে গিয়ে কিছু অপকারিতা দেখা দিতে পারে। এখানে কিছু সাধারণ অপকারিতা উল্লেখ করা হলো:
- অতিরিক্ত ব্যায়ামের ফলে পেশী এবং জয়েন্টে অতিরিক্ত চাপ পড়তে পারে। যা ইনজুরি, স্ট্রেইন এবং সঙ্কোচনের কারণ হতে পারে।
- অধিক ব্যায়াম করার কারণে শরীর ক্লান্ত হয়ে পড়ে এবং পুনরুদ্ধারের সময় কমে যায়। এর ফলে ফ্যাটিগ, ঘুমের সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে এবং সামগ্রিক কর্মক্ষমতা কমে যেতে পারে।
- অতিরিক্ত ব্যায়ামের ফলে টেন্ডনস ও লিগামেন্টসের ওপর চাপ বেড়ে যেতে পারে, যা দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
- অতিরিক্ত ব্যায়াম মানসিকভাবে চাপ এবং উদ্বেগ বাড়াতে পারে। এটি শরীরের স্ট্রেস হরমোনের স্তর বাড়াতে পারে।
- অতিরিক্ত ব্যায়াম হরমোনের ভারসাম্যকে প্রভাবিত করতে পারে। যা মাসিক চক্রের অসঙ্গতি বা অন্যান্য হরমোন সম্পর্কিত সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
- বেশি ব্যায়ামের ফলে শরীরের শক্তি এবং সহনশীলতা কমে যেতে পারে এবং দৈনন্দিন কার্যকলাপের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।
- অতিরিক্ত ব্যায়াম শরীরের বিভিন্ন অংশে ব্যথা ও অস্বস্তির সৃষ্টি করতে পারে। যেমন: পিঠে, হাঁটুতে বা কাঁধে।
- অতিরিক্ত ব্যায়াম করলে শরীরের জল এবং পুষ্টি উপাদানের চাহিদা বৃদ্ধি পায়। যদি পর্যাপ্ত পুষ্টি ও পানি না পাওয়া যায় তাহলে শরীরের অবস্থার অবনতি হতে পারে।
- অতিরিক্ত ব্যায়ামের কারণে ঘুমের সমস্যা হতে পারে এবং পরবর্তীতে ক্লান্তি এবং কর্মক্ষমতা হ্রাস করতে পারে।
পরামর্শ: ব্যায়ামের মধ্যে পর্যাপ্ত বিশ্রামের সময় রাখুন। শরীরকে পুনরুদ্ধারের সুযোগ দিন। বিভিন্ন ধরনের ব্যায়াম একসঙ্গে করুন যাতে কোনো এক পেশীতে অতিরিক্ত চাপ না পড়ে। শরীরের সংকেত অনুযায়ী ব্যায়াম করুন এবং অতিরিক্ত চাপ এড়িয়ে চলুন। পর্যাপ্ত পুষ্টি ও পানি নিশ্চিত করুন। স্বাস্থ্যকর ব্যায়াম রুটিন তৈরি করতে এবং অতিরিক্ত ব্যায়ামের প্রভাব এড়াতে একজন ফিটনেস বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ করা ভাল।
সকালে কি কি ব্যায়াম করা উচিত
সকালে ব্যায়াম করলে শরীর ও মন দুটোই চাঙ্গা থাকে। সকাল বেলা ব্যায়াম করার উপযুক্ত সময় কারণ সকালে ব্যায়াম করার উপকারিতা অনেক। সকালে ব্যায়াম করার কিছু সহজ ও কার্যকরী ব্যায়াম যা সকালে করা যেতে পারে
- জগিং বা হেঁটে চলা: এটি ক্যালোরি বার্ন করতে সাহায্য করে এবং হৃদপিণ্ডের স্বাস্থ্য উন্নত করে।
- স্ট্রেচিং: শরীরের মাংসপেশি নমনীয় রাখতে স্ট্রেচিং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
- পুশ-আপস: উপরের দেহের শক্তি বাড়ানোর জন্য ভালো একটি ব্যায়াম।
- সিট-আপস: পেটের মাংসপেশি শক্তিশালী করতে সহায়ক।
- ইয়ার্ড স্কোয়াটস: নিচের দেহের শক্তি ও স্থিতিশীলতা বাড়াতে উপকারী।
- সাইক্লিং: সাইক্লিং একটি ভাল কার্ডিওভাসকুলার ব্যায়াম।
- যোগব্যায়াম: তাড়াতাড়ি শরীরের সমস্ত মাংসপেশির জন্য এটি উপকারী হতে পারে এবং মানসিক শান্তি প্রদান করে।
এই ব্যায়ামগুলি সাধারণভাবে সকালের সময়ে করা যেতে পারে। কারণ সকালে ব্যায়াম করার উপকারিতা অত্যাধিক। তবে আপনার শরীরের শারীরিক অবস্থা ও স্বাস্থ্য অনুযায়ী ব্যায়াম নির্বাচন করা উচিত। প্রয়োজনে একজন ফিটনেস বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ করা ভাল।
শ্বাস প্রশ্বাসের ব্যায়াম করলে কি হয়?
- শ্বাস প্রশ্বাসের ব্যায়াম করার ফলে শরীর এবং মন উভয়ের উপকার হয়। উপকারিতাসমূহ তুলে ধরা হলো:
- গভীর শ্বাস প্রশ্বাসের মাধ্যমে স্ট্রেস হ্রাস পায় এবং মানসিক শান্তি আসে। এটি উদ্বেগ এবং চাপ কমাতে সাহায্য করে।
- সঠিকভাবে শ্বাস নেয়ার মাধ্যমে শরীরের অক্সিজেন প্রবাহ বাড়ে। যা অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলোর কার্যকারিতা উন্নত করে এবং শরীরের শক্তি বাড়ায়।
- শ্বাস প্রশ্বাসের ব্যায়াম হৃৎপিণ্ড এবং ফুসফুসের কার্যকারিতা উন্নত করে এবং দীর্ঘমেয়াদী শ্বাস প্রশ্বাসের ব্যায়াম ফুসফুসের শক্তি বাড়ায়।
- নিয়মিত শ্বাস প্রশ্বাসের ব্যায়াম ঘুমের গুণমান বাড়াতে সাহায্য করে। কারণ এটি শরীরকে শান্ত করতে সহায়ক।
- এটি মনোযোগ এবং মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়াতে সাহায্য করে। যা দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন কাজ সম্পাদনে সহায়ক।
শ্বাস প্রশ্বাসের মাধ্যমে শরীরের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। সব মিলিয়ে শ্বাস প্রশ্বাসের ব্যায়াম একটি সহজ কিন্তু কার্যকর পদ্ধতি যা আমাদের সামগ্রিক স্বাস্থ্য এবং মঙ্গল বৃদ্ধি করতে সহায়ক।
সকালে ব্যায়াম করার আগে কি খাওয়া উচিত
ব্যায়ামের ১-২ ঘণ্টা আগে কিছু সঠিক খাবার খেলে আপনার শরীরকে প্রয়োজনীয় শক্তি প্রদান করা যায় এবং ব্যায়াম করার সময় আপনার পারফরম্যান্স উন্নত হয়। সাধারণভাবে, ব্যায়ামের আগে খাওয়া উচিত এমন কিছু খাবারের দিকনির্দেশনা নিচে দেওয়া হলো:
- কার্বোহাইড্রেটস: কার্বোহাইড্রেটস শরীরের প্রধান শক্তির উৎস। ব্যায়ামের আগে কমপক্ষে ১-২ ঘণ্টা আগে কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবার খেলে আপনার শরীর পর্যাপ্ত শক্তি পায়। উদাহরণ: ওটস, শস্যের রুটি, শালগম, স্যামন বা ফলমূল (যেমন কলা, আপেল, বেরি)।
- প্রোটিন: প্রোটিন মাংসপেশী পুনর্নির্মাণ এবং শক্তি উন্নত করতে সাহায্য করে। তবে ব্যায়ামের আগে ভারী প্রোটিনের খাবার না খাওয়াই ভালো, কারণ এটি হজম করতে সময় লাগতে পারে। যেমন: গ্রীক দই, প্রোটিন শেক অথবা কিছু টুকরো পনির।
- স্বাস্থ্যকর চর্বি: স্বাস্থ্যকর চর্বি সামান্য পরিমাণে প্রয়োজনীয় শক্তি সরবরাহ করে এবং দীর্ঘস্থায়ী শক্তির জন্য সহায়ক। কাঠবাদম, কাজু বাদাম, চীনা বাদাম অথবা সূর্যমুখী তেল অল্প পরিমাণ।
- হাইড্রেশন: ব্যায়ামের আগে পর্যাপ্ত পানি পান করা জরুরি। এটি আপনার শরীরের জলশূন্যতা প্রতিরোধ করে এবং কর্মক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। একটি গ্লাস পানি অথবা কোকোনাট ওয়াটার।
লেখকের মন্তব্যঃ সকালে ব্যায়াম করার উপকারিতা - অতিরিক্ত ব্যায়ামের অপকারিতা
ব্যায়াম হল শারীরিক স্বাস্থ্যের উন্নতি এবং সুস্থতা বজায় রাখার জন্য বিভিন্ন ধরনের শারীরিক কার্যকলাপ। শারীকির সুস্থতা অর্জনের জন্য ব্যায়াম গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে। আমরা অনেকেই সকালে কি কি ব্যায়াম করা উচিত, শ্বাস প্রশ্বাসের ব্যায়াম করলে কি হয়, সকালে ব্যায়াম করার আগে কি খাওয়া উচিত এবং অতিরিক্ত ব্যায়ামের অপকারিতা কি এ বিষয়গুলো সম্পর্কে অবহিত নয়। এ আর্টিকেলটিতে সকালে ব্যায়াম করার উপকারিতা, অতিরিক্ত ব্যায়ামের অপকারিতা, সকালে কি কি ব্যায়াম করা উচিত ও শ্বাস প্রশ্বাসের ব্যায়াম করলে কি হয় ইত্যাদি বিষয়সমূহ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
আশা করছি এই আর্টিকেল থেকে আপনারা অনেক কিছু জানতে পারবেন। আর্টিকেলটি যদি আপনাদের ভাল লাগে তাহলে পরিচিত জনের সাথে অবশ্যই শেয়ার করবেন। যেন অন্যরা এ সম্পর্কে জানতে পারে। আরও নতুন আর্টিকেল পড়ার জন্য নিউজ ম্যাক্স বিডি ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করার অনুরোধ রইল।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url